শামীম আহমেদ ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় দুর্গা পূজা উপলক্ষে প্রতিমা তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা। আশ্বিন মাসের শেষে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর তাই শরতের শুরুতেই বাজতে শুরু করেছে দেবী দুর্গার মর্তে আগমনী বার্তা। বরাবরের মত এবছরও বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশী পূজা মন্ডপ তৈরী হচ্ছে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায়। বিভাগের বেশী পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিমা তৈরীতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন আগৈলঝাড়ার পাল পাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কুয়াতিয়ারপাড় গ্রামের সার্বজনীন দূর্গা পূজা মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণের সময় উপজেলার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের একমাত্র পাল পাড়ার প্রতিমা নির্মাণ শিল্পী মৃত মহাদেব পালের ছেলে গৌরাঙ্গ পাল, একই বাড়ির শিবানন্দ পালের ছেলে সুদেব পাল ও একই বাড়ির কৃষ্ণ পালের সাথে। গৌরাঙ্গ পাল জানান, উপজেলায় একমাত্র পাল পাড়া হিসেবে তাদের রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যর খ্যাতি।
বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে প্রতিমা নির্মাণসহ বিভিন্ন মেলায় খেলনা সামগ্রী ও তৈজসপত্র নির্মান করে আগুনে পুড়িয়ে হরেক রকমের রং করে তা বিক্রি করে আসছেন। তাদের গ্রামে ১৭টি পরিবার রয়েছে। এই ১৭টি পরিবারের মধ্যে ৪০জন পুরুষ শিল্পী ও অন্তত ৩০জন নারী শিল্পী রয়েছেন। প্রত্যেক পরিবারের নারীদের শিল্প কাজে রয়েছে নিপুন দক্ষতা। তাই পুরুষ শিল্পীদের পাশাপাশি পাল পাড়ার প্রত্যেক নারীরাই মাটির তৈরী শিল্প কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিমার মুখ মন্ডল তৈরীর নিপুন কাজে নারী শিল্পীরা খুবই দক্ষ।
গৌরাঙ্গ পাল আরও জানান, এ বছর তারা কুয়াতিয়ারপাড় ছাড়াও কালুরপাড়, ছবিখারপাড়, ফুল্লেশ্রী, আস্করসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা নির্মান করছেন। এলাকার পরিচিত জনের কারণে এসকল প্রতিমায় পারিশ্রমিক কম হিসেবে কমপক্ষে ৫০হাজার টাকা থেকে ৭৫হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেবেন তারা।
শিল্পীরা জানান, শুভ দিন হিসেবে শ্রাবন মাসে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবের দিন থেকেই তারা প্রতিমা নির্মাণের কাজে হাত লাগান। এর পর মূল প্রতিমায় মাটির প্রলেপের কাজ করেন মনসা পূজার পর থেকে। পাল পাড়ার শিল্পীরা ইতোমধ্যেই দেবীর প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ করেছেন।
এখন চলছে সর্বশেষ মাটির প্রলেপের কাজ। যাকে বলা হয় দো’মাটি করা। এর পর রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলবেন প্রতিমার দৃষ্টি নন্দিত রূপ। তাদের বাড়ির শিল্পীরা উপজেলা ব্যাতীত শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা তৈরী করেছেন। সকল প্রতিমার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এর পর চলবে আলোক সজ্জার কাজ। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বেড়ে চলেছে নির্মান শিল্পীদের ব্যস্ততা।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপগুলো ছন বাঁশের কাঠামোতে মাটির ঢেলা ভেঙ্গে জল মিশ্রিত করে প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে প্রতিমা। পাশেই একটি কাঠের চৌকির উপর শুকানোর জন্য রাখা হয়েছে দেবী দুর্গা সহ বিভিন্ন চরিত্রের মুখ-মন্ডল। অত্যাচারী অসুরের মুখ-মন্ডলের হিং¯্রতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে দেবী দূর্গার মুখ-মন্ডলের প্রফুল্ল হাসির শুভ্রতায়। আবেগ, ভালবাসা, শুদ্ধতা দিয়ে মাটির ঢেলাকে দেবী দুর্গায় রূপান্তর করছেন মৃৎ শিল্পী লিটন পাল ও তার পিতা কানাই চন্দ্র পাল। তারা বলেন, আমাদের কারিগরদের জন্য দূর্গা পূজা সন্নিকটে। হাতে সময় একবারে কম। মাটির প্রলেপের কাজ শেষ করে ফিনিশিং করতে হবে। তাছাড়া আমরা মূর্তি শুকানো নিয়ে ঝামেলায় আছি কারণ এখন এই রোদ এই বৃষ্টি। মূর্তিগুলো ভাল ভাবে শুকানোর পরে করতে হবে রং এর কাজ।
এছাড়াও আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপগুলোতে রনজিৎ পাল, বলাই পাল সহ অন্যান্যো মৃৎ শিল্পীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বলেন,আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রায় ২৫-৩০ জন মৃৎ শিল্পী প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুনিল কুমার বাড়ৈ বলেন, এ বছর ১৫১টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সকল মন্ডপে সর্বাধিক সহযোগীতা করা হবে।
পঞ্জিকা মতে, ৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে মহালয়ার দিন থেকেই মর্তলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেজে ওঠবে। ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দেবীর নবপত্র কল্পারম্ভ ষষ্ঠী পূজা; ওইদিন মন্ডপে মন্ডপে বেঁজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের বাজনার শব্দ। সপ্তমী পূজা, মহা অষ্টমী পুজা, নবমী পূজা ও দশমী বিহিত পূজা ও দশহরার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপি পূজার অনুষ্ঠান সমাপ্ত হবে।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আফজাল হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গা পূজায় যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি প্রতিটি মন্ডপে থাকবে আনসার, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য। মন্ডপের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরীতে থানা পুলিশের তৎপরতার পাশাপাশি র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে অব্যাহত ।
এব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানান, গত বছরের চেয়ে এবছর পূজা মন্ডপ বেশী তৈরী হয়েছে। এবার এবছর পূজা মন্ডপের সংখ্যা দাড়িয়েছে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১শ ৫১টি। নির্বিঘেœ পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসনিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছেন বলেও জানান তিনি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply